23 C
New York
Monday, July 7, 2025
spot_imgspot_imgspot_imgspot_img
More

    এই মুহূর্তে

    কাব্য সাধনায় মগ্ন নামখানার তরুণ

    জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী :- ‘চোখ তুলে দেখোনা কে এসেছে’- কানের কাছে যতই চিৎকার করে ডাকা হোক সস্তা ইণ্টারনেটের দৌলতে বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশ কিশোর-কিশোরীর চোখ তখন মোবাইলের পর্দায় নিবদ্ধ। সাহিত্যচর্চা তো দূরের কথা বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এক নির্জন দ্বীপের বাসিন্দা তারা। তার মাঝেও নিজেকে ব্যতিক্রম হিসাবে চিহ্নিত করে ফেলেছে নামখানার বছর চব্বিশের যুবক ধ্রুব বিকাশ মাইতি। তার সমবয়সী একদল যখন মোবাইল কালচারে অভ্যস্ত সে তখন ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’ মাতোয়ারা। শুরুটা হয়েছিল তেরো-চোদ্দ বছর বয়সে। তখন সে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। স্বভাব-কবি আর পাঁচজন বাঙালির মত কিশোর-কবি ধ্রুব অভিভাবকদের লুকিয়ে কবিতা লিখতে শুরু করে। অথচ মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়ির অভিভাবকদের একটাই স্বপ্ন ছেলে তার ভাল করে পড়াশোনা করুক, জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করুক। তাদের চোখ এড়িয়ে লুকিয়ে লেখা তার কবিতা খাতার পাতায় সযত্নে লুকানো থাকত, দিনের আলোর মুখ দেখতে পেতনা। জানত কেবল ভাই-অন্ত প্রাণ দিদি রুম্পা। ভাইকে সে উৎসাহ দিত। কবি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ধ্রুবর কিশোর বয়সের স্বপ্ন অচিরেই চাপা পড়ে যায়। বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানকে স্বপ্ন দেখতে নাই। মাঝে মাঝে দু’একটা কবিতা লিখলেও পড়াশোনার দিকে নজর দেয় ধ্রুব। জীবনের ধ্রুব লক্ষ্য হয় ভাল করে পড়াশোনা করতে হবে। যদিও যথেষ্ট ভাল ছাত্র সে। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এটাই চলতে থাকে। সে বুঝতে পারেনি সামনে না বললেও তার মা-বাবা তার লেখার বড় ভক্ত। তার আশা ছিল হয়তো একদিন কমল মিত্রের স্টাইলে ভাবগম্ভীর কণ্ঠে বাবা বলে উঠবেন – তুমি ভাল কবিতা লেখ, সঙ্গে পড়াশোনাটা মন দিয়ে করো। বাবার উদ্দেশ্যে লেখা ‘বাবা আমার বড্ড ভাল’- হাত ধরে কাব্যজগতে প্রবেশ। এটা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় কাঁচা হাতে লেখা। আজ লেখাটা হারিয়ে গেছে। ‘বাবার কোনো অভিযোগ নেই / নিজস্ব বলতে আছে কিছু পোড়াভাত।’ বাবা আছেন, মা থাকবেন না সেটাতো হতে পারেনা। কারণ ‘ মা উনুন’। ছোট্ট এই ভাবনা বুঝিয়ে দেয় সংসারে মা-বাবার গুরুত্ব। কাব্য এগিয়ে চলে নিজের ছন্দে। সৃষ্টির আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে স্রষ্টা ‘ছায়াগুলো ধরে ধরে সেলাই’ করে ‘অরণ্য’ গড়ে তুলতে ব্যস্ত। আসলে ‘মানুষকে আগলে রাখার মতো /একটা ছায়াই যথেষ্ট’।

    1710835562820

    কিশোর কবির জীবনে রোমান্টিকতা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। ‘একটা বান্ধবী হবে তীব্র স্বপ্ন ছিল’ যে এখন ‘যুবতি-সভ্যতার ভেতর মাটির ঠোঁটে পা ফেলে হাঁটছে’। ভাবনার মধ্যে নতুনত্ব আছে! তার অবচেতন মনের আশা ছিল কল্পনার বান্ধবী একদিন হয়তো স্রষ্টাকে ‘বাধ্য করবে প্রত্নতাত্ত্বিক হতে। আসলে ‘অধিকার শেখানোর জন্য/…শিখতে হত নামতা’। ওদিকে ‘বান্ধবীর ভেতর / সিন্ধু, হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো সমস্ত সভ্যতা লুকিয়ে আছে’। তবুও মনের মধ্যে সংশয় ছিল ‘কেন যে তাকে ভালোবাসতে গেলাম? তাহলে কি প্রেমিক কবির ‘পুকুরে কেউ ঢিল ছুঁড়ে গেছে।’ এভাবেই ‘নিজের পাতকে কুরুক্ষেত্র করে’ কিশোর কবি এগিয়ে গেছেন। কাব্যরসিক পাঠকের কাব্যপিপাসা মেটানোর জন্য উপহার দিয়েছেন ভিন্ন স্বাদের কবিতা সমৃদ্ধ নয়টি কাব্যগ্রন্থ। কবিতা লেখার সূত্রে ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়তে থাকে। ডাক আসতে থাকে বিভিন্ন সাহিত্য সভা থেকে। উপহারে ভরে ওঠে বাড়ির আলমারি। কিন্তু সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায় যখন তার নাম ওঠে ‘ইণ্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডস‘-এ। এবছর ১ লা জানুয়ারি ‘অথবা জলচক্র’, ‘বোতাম বিশ্বাসের মত’, ‘বান্ধবী’, ‘পাথর চাপা চিৎকার’, ‘চাঁদ হাতে কুরুক্ষেত্র’ নামে পাঁচটি ভিন্ন স্বাদের কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার জন্য সে এই স্বীকৃতি লাভ করে। এদিন ধ্রুবর বাবা আর নিজেকে সামলে রাখতে পারেননি। ছেলের সাফল্যে মা-বাবার চোখ দিয়ে ঝরে পড়ে মুক্ত। ধ্রুবর জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার। ছোট্ট কবিতার আড়ালে আছে বৃহৎ সৃষ্টির সম্ভাবনা। এর মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যাবে ভাবনার খোরাক। শব্দের তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবহার অন্য এক আনন্দ দেয়। কয়েকটি কবিতা পাঠ করে একটি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বাসুদেব সরকার বললেন – সকাল দেখে যেমন অনুমান করা যায় সারাদিন কেমন যাবে তেমনি কবিতাগুলি পাঠ করে এটুকু বলতে পারি কবির একদিন মহীরুহ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে। দরকার যত্নের। দিদি রুম্পা ভাইয়ের সম্পর্কে প্রথমে কোনো মন্তব্য করতে চাইলেন না। অবশেষে আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে বললেন – আমার ভাই আরও বড় হোক। উত্তর আকাশের ধ্রুবতারা যেমন দিগভ্রষ্ট নাবিকদের পথ দেখায় একদিন হয়তো কিশোর কবি ধ্রুব কাব্যজগত থেকে দূরে সরে থাকা মোবাইল কালচারে অভ্যস্ত বর্তমান প্রজন্মের কাছে ধ্রুবতারা হয়ে উঠবে। সার্থক হয়ে উঠবে তার সৃষ্টি।

    এই মুহূর্তে

    spot_imgspot_imgspot_imgspot_img

    এড়িয়ে যাবেন না

    spot_imgspot_imgspot_imgspot_img