নিজস্ব প্রতিনিধি , বাঁকুড়া – বর্ষার মরসুম আসতেই রাজ্য জুড়ে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এর মধ্যেই ডায়রিয়ার হানা বাঁকুড়ার ছাতনায়। একেরপর এক গ্রামবাসী আক্রান্ত হচ্ছেন এই রোগে, তার পরিণতি হচ্ছে মৃত্যু। ইতিমধ্যেই চারজনের মৃত্যু হয়েছে ডায়রিয়ায় এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৫ জন, এমনটাই জানানো হয়েছে গ্রামবাসীর তরফে। যদিও এই ৪ জনের মৃত্যু যে ডায়রিয়াতেই হয়েছে তা মানতে নারাজ জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এর মধ্যেই সম্পূর্ণ বিষয় খতিয়ে দেখতে বাঁকুড়ার ছাতনার তাঁতিপুকুর অঞ্চল পরিদর্শনে আসেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডাঃ সুভাষ সরকার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে , গত কয়েকদিন ধরেই পেট খারাপ, বমির উপসর্গ নিয়ে ছাতনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি হন কয়েকজন রোগী। নতুন করে যে পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সরবেড়িয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং একজনকে রেফার করা হয়েছে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে। ডায়রিয়ায় মৃত্যুর কথা স্বীকার না করলেও নড়েচড়ে বসেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। মেডিক্যাল টিম এবং দুটি পানীয় জলের ট্যাঙ্ক বসানো হয়েছে তাঁতিপুকুরে। সংক্রমণের কারণ খুঁজতে তৎপর স্বাস্থ্য দফতর। স্থানীয় পুকুর এবং পানীয় জলের নলকূপ থেকে জলের নমুনা সংগ্রহ করে চলছে পরীক্ষা। তিনটি অপরিশোধিত পুকুর এবং চার – পাঁচটি নলকূপ ব্যবহারের ওপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সাফ জানানো হয়েছে, ডায়রিয়ায় কোনো গ্রামবাসীর মৃত্যু ঘটেনি। এ প্রসঙ্গে ছাতনা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অর্চনা কুন্ডু জানিয়েছেন, ‘রিপোর্টে বলা হয়েছে এটি কোনো ডায়রিয়া ডেথ নয়। রিপোর্টটি এখনো আমার হাতে আসেনি। আশেপাশের অপরিশোধিত পুকুর থেকেই ছড়াচ্ছে এই রোগ। যারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত তারা প্রত্যেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন’।
তাঁতিপুকুর এলাকা পরিদর্শনে এসে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডাঃ সুভাষ সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘স্থানীয় পুকুরগুলি অপরিশোধিত আর সেখান থেকেই এই রোগের সংক্রমন হচ্ছে। আমি বিডিও অফিসে জানিয়েছি, বিডিও-এর তরফে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা পানীয় জল এবং বাচ্চাদের জন্য ওআরএসের ব্যবস্থা করেছি। ডায়রিয়াতেই মৃত্যু হয়েছে ৪ রোগীর। স্বচ্ছ ভারত অভিযান, প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনার মতো প্রকল্প এখানে ঠিক ভাবে লাগু হয়নি তাই গ্রামের বেহাল দশা’।
আদতে ৩ গ্রামবাসীর মৃত্যু কিভাবে ঘটলো তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক জল্পনা। তবে তাঁতিপুকুর গ্রামের এক স্থানীয় বাসিন্দা এ জল্পনা সরিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘এখনো পর্যন্ত ডায়রিয়াতে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা বেশ আতঙ্কে আছি। শৌচালয়ের ব্যবস্থা নেই আমাদের গ্রামে। বারবার প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।’ এই পরিস্থিতিতে নাজেহাল তাঁতিপুকুর গ্রামের বাসিন্দারা।