নিজস্ব প্রতিনিধি, মুর্শিদাবাদ- টাকার অভাবে ১৫ বছর ধরেও সম্পূর্ণ হয়নি মন্দির। এমন সময় ত্রাতা হয়ে এলেন এক মুসলিম ‘ভাই’। নিজের চেষ্টায় হিন্দু ভাইদের জন্য গড়ে দিলেন ভগবানের আরাধনা করার জায়গা। শুধু তাই নয়, কলকাতা থেকে আনিয়ে দিলেন মা মনসার মূর্তিও। এমনই সম্প্রীতির নির্দশন চোখে পড়ল মুর্শিদাবাদে। আর এই চিত্র দেখে প্রথমেই যা মনে আসে তাহলো কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা, ‘মোরা একবৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান…’।
মুর্শিদাবাদের ভরতপুর থানার তালগ্রাম পঞ্চায়েতের খড়িন্দা গ্রামে প্রায় ১০০টি আদিবাসী ও তপশীলি ভূক্ত পরিবার সেখানে বসবাস করেন। বেশিরভাগ বাড়ি মাটির অথবা ছিটেবেড়া দেওয়া। পাড়ার বেশিরভাগ বাসিন্দা দিনমজুরের কাজ করেন। সেখানেই পাড়ার বটতলায় প্রায় ১৫ বছর আগে একটি মন্দির তৈরির চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু খেটে খাওয়া মানুষের দৈনন্দিন জীবনে খরচের পর আর ক’টা টাকাই বা জমে। এই সমস্যাতেই পড়ছিলেন খড়িন্দাগ্রামের ওই কয়েকটি পরিবার। তাই ১৫ বছর আগে একটি মন্দির তৈরির চেষ্টা করলেও তা আর সম্পূর্ণ করা যায়নি। পাড়ায় চাঁদা তুলে মন্দিরের দেওয়াল চারটিই শুধু তোলা হয়েছিল।
এমন সময়ে বছর খানেক আগে পাড়ায় কিছুজনের মাথায় এসেছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের বাসিন্দা জিলার মির্জার কথা। ঠিক হলো তাঁর কাছে দরবার করা হবে মন্দিরের জন্য। যেমন ভাবা তেমন কাজ। পাড়ার সবাই মিলে ছুটলেন জিলার মির্জার কাছে। জিলার সাহেবের একটি ঠিকা সংস্থা রয়েছে রাজস্থানে। সেখানে তিনি কিছু শ্রমিক নিয়ে বই খাতা বাধাইয়ের কাজ করেন। তাঁর পরিবারও সেখানেই থাকেন। গ্রামের বাড়িতে থাকেন জিল্লার সাহেবের মা ফুলি বিবি। জিলার সাহেব বাসিন্দাদের মন্দির তৈরির আবেদনে সাড়া দেন। মন্দিরের বাকি কাজ করার জন্য তিনি প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর মন্দিরের কাজও শুরু হয়। কাজ দেখাশুনার দায়িত্ব দেওয়া হয় জিল্লার সাহেবের খুড়তুতো ভাই আজিরুল মির্জার উপর। সব মিলিয়ে বছর খানেক মধ্যেই গড়ে উঠল সেই মন্দির। খরচ হলো প্রায় আড়াই লাখ টাকা।
গ্রামের স্বরূপ সর্দার বলেন, “প্রায় ১৫ বছর ধরে আমরা চেষ্টা করেও মন্দির বানাতে পারিনি। তাই গ্রামের সকলে যুক্তি করে জিল্লার সাহেবের কাছে গিয়েছিলাম। জিলার সাহেব একবাক্যে সাড়া দিয়েছেন। মন্দির তৈরির আসল কারিগড় উনি।”
অন্য এক বাসিন্দা অশোক দাস জানান, “১৫ বছর ধরে মন্দিরটি অসম্পূর্ণ হয়ে পড়েছিল। আমরা দিনমজুরের কাজ করে আর টাকা জোগাতে পারছিলাম না। তাই জিলার ভাইয়ের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। তিনি নিজের টাকা খরচা করে আমাদের জন্য মন্দির গড়ে দিলেন।”