নিজস্ব প্রতিনিধি , মরক্কো – মাঝে কেটে গেছে প্রায় ৪৮ ঘন্টা , কিন্তু পরিস্থিতিতে বদল তো দূর , যেন ক্রমেই বাড়ছে হাহাকার। চারপাশে শুধু ধ্বংসস্তূপ , রক্ত আর স্বজনহারার আর্তনাদ। গোটা দেশে যেন মুহূর্তেই কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। গত শুক্রবার গভীর রাতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০০০। এখনো আহত ১২০০ , তাছাড়াও নিখোঁজ কয়েকশো মানুষ। এই মৃত্যুর সংখ্যা কোথায় গিয়ে থামবে তা ভেবেই শিহরিত হচ্ছে বিশ্ববাসী।
সূত্রের খবর , গত শুক্রবার রাত ১১.১১ মিনিট (মরক্কোর সময় অনুযায়ী) নাগাদ ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে উত্তর আফ্রিকার মরক্কো। মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভের দাবি , মরক্কোতে হওয়া এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬.৮। আফ্রিকার আটলাস পাহাড়ের ৫৬ কিলোমিটার পশ্চিমে ও মারাকেশের থেকে ৭২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম ওকাইমেডেন এলাকায় ছিল এই কম্পনের উৎসস্থল। মাটি থেকে মোট ১৮.৫ কিলোমিটার গভীরে ছিল কম্পনের উৎসস্থল। শুক্রবার হওয়া এই ভূমিকম্পের তীব্রতা এতটাই ছিল যে , পর্তুগাল সহ আলজিরিয়াতেও কম্পন অনুভূত হয়। এরপর মাত্র ১৯ মিনিট পর ফের আফটারশকে কেঁপে ওঠে গোটা দেশ। প্রথম পরিস্থিতিতে যতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল , এই আফটার শক একেবারেই সব ধূলিসাৎ করে দেয়।
প্রশাসনের দাবি , শুক্রবারের এই ভয়াবহ ভূমিকম্পে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মরক্কোর ঐতিহাসিক শহর মারাকেশ। ভূমিকম্পে কার্যত মাটিতে মিশিয়ে গেছে গোটা মেদিনা। এখানে রয়েছে মরক্কোর ঐতিহাসিক একাধিক সৌধ। এই শহরকেই ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তকমা দিয়েছিল। শুক্রবারের এই কম্পনে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে মরক্কোর রাজধানী রাবাতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও কাসাব্লাঙ্কা, ইসাউইরা শহরেও বিরাট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
প্রসঙ্গত , এরআগে মরক্কোয় এমন বিধ্বংসী ভূমিকম্প হয়েছিল ২০০৪ সালে। সেসময় কম্পনের মাত্রা ছিল ৬.৩। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মরক্কোর বন্দর শহর আল হোসেইমা। সেসময় মোট মৃত্যু হয়েছিক ৬০০ জন নাগরিকের। এরআগে অবশ্য , মরক্কোর ইতিহাসে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল ১৯৬০ সালে। সেসময় ভূমিকম্পের কেদ্রছিল আগাদির শহর। সেসময় মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ১২ হাজারেরও বেশি মানুষের। তারপর এটাই এযাবৎ কালে মরক্কোর ইতিহাসের দ্বিতীয় ভয়াবহ কম্পন। যারফলে এখনো পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২০০০ জনের। তবে প্রশাসনের আশঙ্কা মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই মরক্কোর রাজা ষষ্ঠ মহম্মদ ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করছেন।
মরক্কোর এই বিধ্বংসী ভূমিকম্পে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শনিবার জি-২০ সম্মেলন চলাকালীন তিনি মরক্কোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। মরক্কোর প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি জানিয়েছেন,’ এই ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যুর খবরে আমি অত্যন্ত দুঃখিত ও ব্যথিত। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার সহানুভূতি ও সমবেদনা রইল। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। মরক্কোর এই কঠিন পরিস্থিতিতে ভারত সব রকম ভাবে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত’।