নিজস্ব প্রতিনিধি , কলকাতা – ‘চাঁদমামা’র বাড়িতে অতিথি হিসেবে পদার্পণ করেছে ভারত। এই প্রথম কোনও দেশ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখল। আর তার পিছনে অনস্বীকার্য অবদান রয়েছে ইসরোর বিজ্ঞানীদের। পরপর দুইবার ব্যর্থতার পরেও হাল না ছেড়ে সফলতার মুখ দেখিয়েছে ভারতকে। আর এই বিজ্ঞানীদের তালিকায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন বঙ্গসন্তান। যাদের নাম চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্যের পিছনে জ্বলজ্বল করছে। আসুন এবার তাদের চিনে নেবার পালা। এনারা হলেন-
১) বিজয় দাই। বাড়ি বীরভূমের মল্লারপুরের দক্ষিনগ্রামে। পড়াশোনা কল্যাণী সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি-টেক এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম-টেক। বীরভূমের বিজয় দাই চন্দ্রযান -৩ এর অপারেশন টিমের সদস্য।
এপ্রসঙ্গে বিজয় দাইয়ের বাবা নারায়নচন্দ্র দাই জানান, ছেলের সাফল্যে আমরা আনন্দিত এবং গর্বিত। ছেলেকে খুব কষ্ট করে মানুষ করেছি। সে যে মানুষের মত মানুষ হয়েছে এটা দেখে গর্ববোধ হচ্ছে।
বিজয়ের মা জানান , ছেলে যে গ্রামের উজ্জ্বল করছে তার জন্য আরও আনন্দ হচ্ছে। ছেলের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রামের ছেলেরা আরো আগে যাক এই প্রার্থনাই করবো।
২) সৌম্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বাড়ি বীরভূমের সিউড়ির রায়পুরে। পড়াশোনা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি-টেক। ইনি রিমোট সেন্সিং স্পেসক্র্যাক্ট মিশনে যুক্ত। চন্দ্রযান-৩ এর অপারেশন ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন।
৩) কৃশানু নন্দী। বাড়ি বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের ডান্নাতে। পড়াশোনা করেছেন আরসিসি ইনস্টিটিউট অফ ইনফর্মেশন টেকনোলজি থেকে বি-টেক, এম-টেক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ইনি ছিলেন চাঁদে নামার পর রোভারের গতিবিধি সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা দলের সদস্য।
৪) তুষার কান্তি দাস। বাড়ি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায়। পড়াশোনা করেছেন বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে গনিতে স্নাতক। এরপর আইআইটি খড়গপুর ও আইএস ধানবাদ থেকে উচ্চতর শিক্ষা লাভ করে। ইনিও চন্দ্রযান-৩ এর প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত।
৫) অনুজ নন্দী। বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে পড়াশোনা করেছেন রায়গঞ্জ ইউনির্ভাসিটি কলেজের পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর। পরে, এম টেক এবং পি এইচ ডি করেছেন । ইনি চন্দ্রযান ৩ -এর ‘ল্যান্ডার’ কে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে যে ‘প্রোপালশন মডিউল পেলোড ‘, তার গায়ে ‘স্পেকট্রো- পোলামেট্রি অব হ্যাবিটেবল প্ল্যানেট আর্থ ‘(সংক্ষেপ ‘শেপ’) নামে যন্ত্র নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন।
৬) পীযূষ কান্তি পট্টনায়ক। বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের উত্তর কাটালে। পড়াশোনা করেছেন কল্যাণী সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি-টেক এবং আইআইটি খড়গপুর থেকে এম-টেক। ইনি চন্দ্রযান-৩ এর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন।
সফলভাবে অবতরণের পর পীযূষ কান্তি জানান, চন্দ্রযান ২-এর ব্যর্থতাই নতুন অভিযানের আশা জুগিয়েছে। ঘুরে দাঁড়িয়ে মিলেছে সাফল্য। ভবিষ্যতের গবেষণায় এই সাফল্য রসদ জোগাবে বলে মনে করছেন পাঁশকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে পীযূষকান্তি পট্টনায়ক।
তিনি আরও বলেন, ‘চন্দ্রযান ৩-এর সফরটা বেশ কঠিন ছিল। চন্দ্রযান ২-এর অভিযানের সময়ও আমি ইসরোয় ছিলাম। সেসময়ে ‘সফট-ল্যান্ডিং‘-এ সমস্যা হচ্ছিল। তবে এবার আমরা আশাবাদী ছিলাম। ‘বিক্রম’-কে পাঠানোর আগে বারে বারে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছিল। আমাদের আশা মতোই সবকিছু ঠিকভাবে হয়ে গিয়েছে, আমরা ভীষণ খুশি।’
৭) কৌশিক নাগ। বাড়ি জলপাইগুড়ি, পড়াশোনা করেছেন জলপাইগুড়ি সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে। ইনি চন্দ্রযান ৩ -এর সফটওয়্যার অপারেশনে যুক্ত।
উল্লেখ্য , গত ১৪ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল এই চন্দ্রযান-৩। এরপর গত ৫ আগস্ট চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে বিক্রম নামের চন্দ্রযান-৩ টি। আর এবার সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বুধবার চাঁদের মাটিতে অবতরণ করল চন্দ্রযান-৩। ভারতই প্রথম দেশ যে চন্দ্রযান-৩ এর মাধ্যমে চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে স্পর্শ করতে পারল। আর সেই যাত্রায় বঙ্গের বিজ্ঞানীদের অবদান ভারতের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।