নিজস্ব প্রতিনিধি, নদীয়া – যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে হোস্টেল থেকে নীচে পড়ে মৃত্যু হয় প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার। সেই ঘটনার পর ভীষণ ভাবে প্রকট হয় র্যাগিং ইস্যু। ঘটনায় গ্রেফতারও হয়েছে যাদবপুরেরই পড়ুয়া ও প্রাক্তনীরা। এই মামলা এখনও চলছে। এরই মধ্যে গত দু’দিন আগে ওই ছাত্রের মা-বাবা দেখা করে যান মুখ্যমন্ত্রীর সাথে। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন মৃত ছাত্রের নামে হাসপাতালের নামকরণ। আর এবার তাতেই ক্ষুব্ধ হল স্থানীয় মানুষজন।
মৃত ছাত্রের নামে হাসপাতালের নামকরণ করার প্রতিবাদে বুধবার সকালে নদীয়ার বগুলায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল হলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বপ্নদীপ কুন্ডু স্মৃতি রক্ষা কমিটির সদস্যরা। সম্প্রতি মৃত ছাত্রের মা বাবা নবান্নে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে। ছাত্রটির অকাল মৃত্যুর কারণে মানবিকতার দিকে নজর রেখে মৃত ছাত্রের বাসভূমি বগুলার গ্রামীণ হাসপাতালটি ছাত্রটির নামে নামাঙ্কিত করার পাশাপাশি বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালের প্রাঙ্গনে তাঁর আবক্ষ মূর্তি প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করেন।
সেই মত সরকারিভাবে বগুলা হাসপাতালের নাম মৃত ছাত্রের নামে নামকরণ করার জন্য সরকারি ভাবে অর্ডার জারি হয়। এরপরই তড়িঘড়ি হাসপাতালের নাম পরিবর্তন করে মৃত ছাত্রটির নামে নামকরণের কাজ শুরু হয় বগুলায়। আর তাতেই বিপত্তির সৃষ্টি হয়। বগুলা হাসপাতালে নাম পরিবর্তন করে ছাত্রটির নামে নামাঙ্কিত করার প্রতিবাদে বুধবার সকালে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন ঐ স্মৃতি রক্ষা কমিটির সদস্যরা। তাঁদের সাথে যোগ দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনাস্থলে বিএমওএইচও স্থানীয় থানার আধিকারিকরা পৌঁছালে তাদের ঘিরেও প্রতিবাদ দেখান বিক্ষোভকারীরা।।
তাদের দাবি,ছাত্রটি মৃত্যুকালে নাবালক ছিলেন সেই জায়গা থেকে আইনত তাঁর নাম ব্যবহার করে হাসপাতালের নামকরণ করাটা কতটা যুক্তিযোগ্য? পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষা নিতে গিয়ে ছাত্রটির রহস্য মৃত্যু হয়েছে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি পরিচালিত হোস্টেল ক্যাম্পাসে। কাজেই নাম পরিবর্তন করতে হলে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি পরিচালিত কোন আবাসিক হোস্টেল বা কক্ষের নাম পরিবর্তন করা হোক।
মূলত এই দাবিতে বুধবার রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তারা। খবর পেয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে হোস্টেলের ছাদ থেকে নিচে পড়ে রহস্য মৃত্যু হয় বগুলার বাসিন্দা এক মেধাবী ছাত্রের। এরপরই র্যাগিং এর অভিযোগ উঠে আসে। এবং দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে কলকাতা যাদবপুর, নদীয়ার বগুলা সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা। এক জোটে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন ছাত্র শিক্ষক সমাজ থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশ।
পরিস্থিতি সামাল দিতে তদন্তে নেমে বেশ কয়েকজনকে আটক ও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মৃত ছাত্রের পরিবার সম্প্রতিকালে নবান্নে গিয়ে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রীর সাথে। সেই সূত্র ধরে নদীয়ার বগুলা গ্রামীণ হাসপাতালটি মৃত ছাত্রের নামে নামাঙ্কিত করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। মূলত তারই প্রতিবাদে মঙ্গলবার বগুলার বিভিন্ন প্রশাসনিক ভবন ছাড়াও পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে স্মৃতি রক্ষা কমিটির সদস্যরা।